জাপানের মেয়ে মানেই পুতুল পুতুল চেহারা আর দাগমুক্ত সুন্দর, মসৃণ ও কোমল ত্বক। কারো চেহারা দেখে বয়স বোঝার কোনো উপায়ই নেই। বয়সের ছাপ, বলিরেখা, ফাইন লাইন এসব কিছুই জাপানের নারীদের ত্বকে দেখা যায় না বললেই চলে। ঝকঝকে কাঁচের মতো এমন ত্বক পেতে কে না চায়? কিন্তু জাপানের মেয়েদের এই কোমল ও মসৃণ ত্বকের রহস্য কী?
অনেকেই মনে করতে পারেন, জাপানের মেয়েদের মত এরকম দাগমুক্ত, কোমল ত্বক পেতে হয়তো অনেক অনেক রূপচর্চা, স্কিন ট্রিটমেন্ট এসবের প্রয়োজন হয়। কিন্তু আসলেই কি তাই? জাপানের মেয়েদের লাবণ্যময় ত্বকের পিছনের গোপন রহস্য হিসেবে কী কী কাজ করে চলুন জেনে নেওয়া যাক:
মিনিমাল স্কিন কেয়ার রুটিন:
জাপানের মেয়েদের পেলব ত্বকের রহস্যের অন্যতম চাবিকাঠি হল তাদের মিনিমাল স্কিন কেয়ার রুটিন। এই স্কিন কেয়ার রুটিনটি খুবই সহজে এবং কম সময়ে করা যায়। তাই প্রতিদিন একই স্কিন কেয়ার রুটিন মেনে চলতে খুব বেশি ঝামেলা করার প্রয়োজন হয় না। জাপানের মিনিমাল স্কিন কেয়ার রুটিনে রয়েছে ৪টি ধাপ।
১) ডাবল ক্লিনজিং
২) টোনিং
৩) সিরাম
৪) ময়েশ্চারাইজার
এই ৪ ধাপেই প্রতিদিনের ত্বক পরিচর্যা সম্পন্ন হয়।
প্রতিদিন সন্ধ্যায় বা রাতে মাত্র ৭ থেকে ৮ মিনিট ব্যয় করলেই আপনার ত্বকে পাবেন সতেজ অনুভব। মূলত ৪ ধাপের এই মিনিমাল স্কিন কেয়ার রুটিনই জাপানিজ নারীদের লাবণ্যময় ত্বকের গোপন সূত্রগুলোর একটি।
ট্র্যাডিশনাল ব্যালেন্স ডায়েট:
ত্বকের সৌন্দর্য কিন্তু শরীর ও স্বাস্থ্যের উপর অনেকটাই নির্ভর করে। আপনি যতোই ত্বকের পরিচর্যা করুন না কেন, শারীরিকভাবে যদি সুস্থ না থাকেন তাহলে সেটার প্রভাব আপনার সৌন্দর্যের উপর পড়বেই। জাপানের মেয়েরা শরীরের সুস্থতার ব্যাপারে দারুণ সচেতন। তাই তারা সব সময়ই সুষম খাবার গ্রহণ করে। জাপানের ট্র্যাডিশনাল ডায়েটের মধ্যে রয়েছে স্যুপ, সবজি, ভাত, মাছ ইত্যাদি। ভিটামিন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, আয়োডিন, কেরোটিন সমৃদ্ধ খাবার জাপানের ট্র্যাডিশনাল ব্যালেন্স ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত। এই জাতীয় খাবার ত্বকে টক্সিনের পরিমাণ কমায়, বয়সের ছাপ ভিতর থেকে দূর করে এবং ত্বককে ভেতর থেকেই উজ্বল করে তোলে।
ত্বক পরিচর্যায় প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার:
জাপানের মেয়েরা ত্বক ও চুলের পরিচর্যায় প্রাকৃতিক উপাদানের গুণাগুণ সমৃদ্ধ প্রসাধনী ব্যবহার করে থাকে। যে প্রাকৃতিক উপাদানগুলি জাপানের মেয়েরা ত্বকচর্চায় বেশি ব্যবহার করে থাকে সেগুলো হল:
- গ্রিন টি: গ্রিন টি জাপানের নারীদের রূপচর্যায় ব্যবহারের অন্যতম উপকরণ। গ্রিন টি দিয়ে ত্বক পরিচর্যার পাশাপাশি হেয়ার মাস্কও তৈরী করা যায়। এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিইনফ্ল্যামাটরি বৈশিষ্ট্য যা ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে, ব্রণ ও অ্যাকনে সমস্যা সমাধান করতে, সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ত্বককে সুরক্ষা দিতে ও স্কিন টোন বজায় রাখতে দারুণ কার্যকর ভুমিকা পালন করে।
- ক্যামেলিয়া অয়েল: জাপানের মেয়েদের রূপচর্চার তালিকায় ক্যামেলিয়া তেল আবশ্যক একটি উপাদান। তারা ক্যামেলিয়া ফুলের নির্যাস থেকে তৈরি স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট বেশি ব্যবহার করে থাকে। ক্যামেলিয়া অয়েল ওমেগা-৯ ফ্যাটি এসিড, প্রোটিন ও গ্লিসারাইড সমৃদ্ধ। তাই এটি চুল ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে দারুণ কার্যকর একটি উপাদান।
- ভিটামিন সি: ভিটামিন সি ত্বকে কোলাজেন সাপ্লাই বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
জাপানের মেয়েদের খাদ্য তালিকায় তাই ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার, ফল, সাপ্লিমেন্ট থাকেই। ভিটামিন সি ত্বকের পিগমেন্টেশন দূর করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং টানটান ভাব বজায় রাখতে সাহায্য করে। জাপানের মেয়েদের দাগ ও ছোপহীন উজ্জ্বল ত্বকের রহস্যের আরেকটি চাবিকাঠি হলো ভিটামিন সি।
সানস্ক্রিনের ব্যবহার:
জাপানের মেয়েরা শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা সব ঋতুতেই সানস্ক্রিন ব্যবহার করে। ফলে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব তাদের ত্বকের উপর পড়ে না। জাপানের সানস্ক্রিন লাইটওয়েট ফর্মুলায় তৈরি তাই সহজেই ত্বকের সাথে মিশে যায়।
আর আকাশে সূর্য থাকুক বা না থাকুক, নিয়মিত দুই বেলা সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে ত্বকে পোড়া দাগ বা ছোপ ছোপ দাগ হয় না। জাপানের মেয়েদের এরকম দাগমুক্ত স্নিগ্ধ ত্বকের রহস্যের পেছনে নিয়মিত সানস্ক্রিনের ব্যবহারও একটি সূত্র।
স্টিম বাথ:
জাপানের মেয়েদের রূপচর্চায় স্টিম বাথ অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। সারাদিনের পরিশ্রমের পর সন্ধ্যায় স্টিম বাথ ক্লান্তির অনেকটাই ধুয়ে ফেলতে সাহায্য করে। জাপানে স্টিম বাথে সি সল্ট বা অ্যারোমা অয়েল ব্যবহার করা হয়। এতে ত্বকের প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা বজায় থাকে। আর স্টিম বাথ ত্বকের পোরস দূর করে এবং উজ্জ্বলতা বাড়ায়। পরিশেষে রাতের ঘুমটা সুন্দর হয়।
জাপানে সৌন্দর্যের সংজ্ঞা কিন্তু শুধু ফর্সা বা উজ্জ্বল ত্বক নয়। সৌন্দর্য মানেই ভিতরের সৌন্দর্য। তাই ত্বক পরিচর্যার পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাস ও দৈনন্দিন রুটিন মেনে চলাও জরুরি। খাদ্যাভ্যাস এবং প্রতিদিনকার রুটিনে পরিবর্তন এনে আমাদের পক্ষেও তাদের মত চমৎকার ত্বক ও সৌন্দর্য পাওয়া খুবই সম্ভব।
Reference: