সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির প্রভাবে আমাদের ত্বকে নানারকম ক্ষতি হয়। সবচেয়ে বড় ভয় হল স্কিন ক্যান্সারের সম্ভাবনার। পাশাপাশি ত্বকে পোড়া দাগ, সানবার্ন, লাল তিল ইত্যাদির আশঙ্কা তো রয়েছেই। তাই সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে নিজের ত্বককে সুরক্ষা দিতে বেশির ভাগ সচেতন মানুষই সানস্ক্রিন ব্যবহার করেন।
তবে সানস্ক্রিন মাখলেই কি রোদের তাপ থেকে ত্বকে বাঁচানো যায়? সানস্ক্রিন ব্যবহারের কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে, সেগুলো অনেকেই জানেন না। সেই সাথে অনেকের মনে রয়েছে সানস্ক্রিন নিয়ে বেশ কিছু ভ্রান্ত ধারণা। আজ আমরা সানস্ক্রিন ব্যবহার নিয়ে যত ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত রয়েছে সেসব নিয়েই আলোচনা করবো।
সানস্ক্রিন ব্যবহারের কারণ কী কী:
সূর্যের আলোতে রয়েছে ইউভি এ, ইউভি বি ও ইউভি সি নামক তিন ধরনের ক্ষতিকর অতিবেগুণী রশ্মি। এই রশ্মি সরাসরি আমাদের ত্বকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরী করে। যেমন ত্বকে কালো ছোপ দাগ, বলিরেখা, অল্প বয়সে ত্বকে ভাঁজ পড়ে যাওয়া, ত্বকের মসৃণতা লোপ পাওয়া, ত্বক পাতলা হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। সবচেয়ে বড় ক্ষতি হতে পারে ত্বকের মেলানিন কমে গিয়ে স্কিন ক্যান্সারের সম্ভাবনা বৃদ্ধি।
তাহলে এইসব সমস্যা এড়াতে কি আমরা ঘরের বাইরে বের হওয়া বন্ধ করে দেবো? একদম না। সানস্ক্রিন ব্যবহারে আমরা এইসব সমস্যার মুহুর্তেই সমাধান পেতে পারি। সানস্ক্রিনে রয়েছে এসপিএফ যা আমাদের ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
এসপিএফ ও পি এ প্লাস কী?
সানস্ক্রিনে আমরা সবসময় দুটো জিনিস লেখা দেখি, একটি হল এসপিএফ এবং আরেকটি পি এ প্লাস। চলুন আগে জেনে নিই এসপিএফ ও পি এ প্লাস বলতে কী বোঝায়।
এসপিএফ মানে হল সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর, অর্থাৎ আপনার ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে সুরক্ষা কতক্ষণ দিতে পারবে তা নির্ভর করছে একটি সানস্ক্রিনে কত পরিমাণ এসপিএফ আছে। আপনার সানস্ক্রিনে এসপিএফ সবসময় ৩০ বা তার উপরে আছে কি না এটা খেয়াল করতে হবে। যে সানস্ক্রিনে যত বেশি এসপিএফ আছে সেটা আপনার ত্বককে তত ভালোভাবে সুরক্ষা দেবে। তাই সানস্ক্রিন কেনার আগে এসপিএফ ফ্যাক্টরের দিকে নজর রাখা খুবই জরুরি।
এবার পি এ প্লাস কী তা জেনে নিই। পি এ প্লাস বলতে বোঝায় প্রোটেকশন গ্রেড অফ ইউভি এ, অর্থাৎ পি এ হল সানস্ক্রিনের সেই ফ্যাক্টর যা নির্দেশ করে সানস্ক্রিনটি সূর্যের ক্ষতিকর ইউভি বি রশ্মির পাশাপাশি ইউভি এ রশ্মি থেকে কতোটা সুরক্ষা দিতে পারবে। যত বেশি পি এ প্লাস, তত বেশি ইউভি এ থেকে সুরক্ষা। সানস্ক্রিনে এসপিএফ বেশি যত বেশি থাকে পি এ প্লাসও তত বেশি থাকে।
সানস্ক্রিন ব্যবহারে ভুলগুলি:
সানস্ক্রিন ব্যবহারের পরেও অনেকের অভিযোগ থাকে যে ত্বকে রোদে পোড়াভাব দুর হচ্ছে না। এর কারণ কী? অনেকেই সানস্ক্রিন ব্যবহার করলেও সঠিক নিয়মে ব্যবহার করেন না। চলুন জেনে নিই সানস্ক্রিন ব্যবহারে কোন ভুলগুলি আমরা সাধারণত করে থাকি এবং সঠিকভাবে সানস্ক্রিন ব্যবহার কীভাবে করতে হবে।
১। এসপিএফ না দেখে কেনা:
অনেকেই সানস্ক্রিন কেনার সময় সান প্রোটেকশন ফর্মুলা দেখে কেনেন না। এতে করে সেই সানস্ক্রিন তাকে অনেক লম্বা সময় ধরে সুরক্ষা দিতে পারে না। সানস্ক্রিন কেনার সময় অবশ্যই আপনাকে দেখে নিতে হবে যে এতে এসপিএফ ৩০ বা তার বেশি আছে কি না। কম এসপিএফযুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করা বন্ধ করতে হবে।
২। সানস্ক্রিন ব্যবহারের পরিমাণ:
সানস্ক্রিন ব্যবহার করলেও অনেকে খুবই অল্প পরিমাণ ব্যবহার করেন যা একদম ভুল। সানস্ক্রিন সবসময় ত্বকে, ঘাড়ে, হাতে ও পায়ে মোটা লেয়ারে ব্যবহার করতে হবে। বাইরে বের হওয়ার ১৫ মিনিট আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে ভালো। বেশি সময় ধরে বাইরে থাকলে ২ ঘন্টা পর পর সানস্ক্রিন ত্বকে লাগিয়ে নিতে হবে।
৩। শুধু ত্বকেই সানস্ক্রিন লাগাবেন?
সানস্ক্রিন সম্পর্কে সবচেয়ে ভ্রান্ত ধারণার একটি হল, শুধুমাত্র মুখের ত্বকেই সানস্ক্রিন লাগালে ত্বক সুরক্ষিত থাকে। সূর্যের আলোতে আমাদের মুখের ত্বকের পাশাপাশি গলা, ঘাড়, হাত ও পাও অনাবৃত থাকে। তাই এই সমস্ত জায়গায় যদি সানস্ক্রিন না ব্যবহার করেন তাহলে সহজেই এই জায়গাগুলোতে সানবার্ন হয়ে যাবে। তাই বাইরে যাওয়ার আগে শরীরের অনাবৃত জায়গাগুলোতে সানস্ক্রিন লাগিয়ে নিন।
৪। আকাশে সূর্য নেই তাই সানস্ক্রিনও ব্যবহারের প্রয়োজন নেই?
এটি আরেকটি ভুল ধারণা। আমরা শুধু তখনই সানস্ক্রিন লাগাই যখন আকাশে কড়া রোদ থাকে। মেঘাচ্ছন্ন আকাশ বা শীতকালে সানস্ক্রিন লাগানোর কী প্রয়োজনীয়তা নেই? অবশ্যই আছে। কারণ, আকাশে মেঘ থাকলেও মেঘের আড়ালে সূর্য থাকে, শীতকালেও এইরকমভাবে আকাশে সূর্য থাকে। আর তাই তার ক্ষতিকর রশ্মিও আমাদের ত্বকে প্রভাব ফেলে। তাই শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা সব ঋতুতেই নিয়ম মেনে সানস্ক্রিন লাগাতে হবে।
৫। ময়েশ্চারাইজারের পরে সানস্ক্রিন ব্যবহার:
অনেকেই আগে ময়েশ্চারাইজার দিয়ে তারপর সানস্ক্রিন ব্যবহার করেন। বাইরে বের হওয়ার আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন একদম ফ্রেশ ত্বকে। অর্থাৎ মুখে ফেসওয়াশ দেয়ার পর। সরাসরি ত্বকে সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে ত্বক সুরক্ষিত থাকে। সানস্ক্রিন ব্যবহারের পরে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
সানস্ক্রিন আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ত্বকের পরিচর্যায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস। তাই এটি ব্যবহারের সঠিক নিয়ম জেনে তারপর ব্যবহার করতে হবে। সারাদিন পর বাসায় ফিরে অবশ্যই ত্বক থেকে সানস্ক্রিন এবং অন্যান্য মেক-আপ তুলে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে টোনার ও ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। ত্বক পরিচর্যার ধাপগুলি মেনে চললে আপনার ত্বকও হয়ে উঠবে দীপ্তিময়।
Reference:
American Academy of Dermatology Association